কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান নিহতের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে গণশুনানি শুরু করেছে সরকার গঠিত তদন্তদল। পূর্ব নির্ধারিত ঘোষণা অনুসারে রোববার (১৬ আগস্ট) সকাল ১০টা থেকে এই শুনানি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। টেকনাফের শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়ে শুনানিতে বক্তব্য দিতে আগ্রহীদের নাম রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তদন্ত দলের সদস্য কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মোহাম্মদ শাহজাহান আল এই তথ্য জানিয়েছেন।
শুনাননিতে স্থানীয় ১২ ব্যক্তি শুনানিতে অংশ নিচ্ছেন। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য গ্রহণ শুরু করে তদন্তদল। শুনানিতে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মনোনীত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের লে. কর্নেল সাজ্জাদ, চট্টগ্রামের ডিআইজি মনোনীত অতিরিক্ত ডিআইজি জাকির হোসেন এবং কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাজাহান আলি উপস্থিত রয়েছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের স্বাক্ষীদের অপহরণ করা হয়েছে দাবি করে পুলিশের অযাচিত একটি মামলার পর আতংক ছড়ায় স্থানীয়দের মাঝে। এরপর শংকা জেগেছিল সিনহা হত্যার বিষয় নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা কথা বলবেন কি না। গণশুনানিতে আসবেন কিনা তারা। তবে স্বেচ্ছায় আসাদের মাঝে পুলিশের সাজানো কোনো ব্যক্তি রয়েছে কিনা সেই শংকাও উড়িয়ে দেয়া যায় না বলে দাবি করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি। শুনানি গ্রহণকারীরা বক্তব্য শুনেই বুঝতে পারবেন কারা সাজানো এবং কারা বাস্তবিক ঘটনার প্রত্যক্ষকারী, এমনটিই অভিমত তার।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, তদন্তের স্বার্থে মাঠ পর্যায়ে যেখানে যাওয়া প্রয়োজন হবে সেখানে যাওয়া হবে। যার যার সঙ্গে কথা বলা দরকার তাদের সঙ্গে কথা বলব। দুঃখজনক ঘটনাটির নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ তদন্ত করা হবে। এরই অংশ হিসেবে আজ (১৬ আগস্ট) গণশুনানি করা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সকাল সাড়ে ৯টা থেকে গণশুনানি স্থলে আসা শুরু করেন সবাই। বক্তব্য দিতে আগ্রহীরা নাম রেজিস্ট্রেশন বুথে যান। গণশুনানি উপলক্ষে মেরনি ড্রাইভের শাপলাপুর এলাকা, ক্যাম্পস্থল এবং আশপাশে কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে সেনাবাহিনী ও অন্য শৃঙ্খলাবাহিনী। বিপুল পরিমাণ গণমাধ্যমকর্মীও এসেছেন ঘটনাস্থলে। আশপাশে তাদের যাতায়াত অবাধ থাকলেও শুনানি কক্ষে গণমাধ্যমের কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিও চিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় নিহতের বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে গত ৫ আগস্ট টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরির্দশক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। আর মামলাটির তদন্তভার দেয়া হয়েছে র্যাবকে। ইতোমধ্যে মামলার নতুন আইও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।