গল্পটি ভয় কে জয় করার

0
2089

জীবনের অনেকগুলো বছর গৃহিণী হিসেবে কাটিয়ে দেওয়ার পর মনে হল যে, এভাবে আর নয় কিছু একটা করার প্রয়োজন। এই প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি তাও প্রায় তিন বছর যাবত।

গৃহিণী হিসেবে এতোগুলো বছর পার করেছি যে, মাথায় কিছুই আসছে না বা বলতে পারেন সাহস পাচ্ছিনা। তিন বছর ধরে ভাবছি আর ভাবছি। কিছু করার জন্য যখনি ভাবি তখনি ভয় নামক এক অদ্ভুত জিনিস মাথায় চেপে বসে। তাৎক্ষণিক সব গুলিয়ে ফেলি। তারপরও থামতে পারছি না বা থেমে নেই। ভয় কে জয় করার নেশা যেন আমাকে ছাড়ছেই না।

অবশেষে ভয় থেকেই ভয় কে জয় করলাম। ভয় থেকে জয় এটা আবার কি?

২০২০ সালে চীনের উহানে যখন মহামারি করোনায় প্রচুর লোক মারা যাচ্ছিল, তখন থেকেই সারা পৃথিবীর মানুষ ভীত হয়ে গিয়েছিল। তারপড় যখন মার্চ মাসের ৮ তারিখে বাংলাদেশে প্রথম করোনার রোগী শনাক্ত হলো এবং একই মাসের ২৬ তারিখে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় লকডাউন শুরু হয়ে গেল, তখনই অনেক মানুষের মত আমার পরিবারেও আর্থিক সমস্যা দেখা দিল। খুব ভাবনায় পড়ে গেলাম।

আমার স্বামীর ব্যবসার অবস্থা দিন দিন খারাপ হতে লাগল। বুঝে উঠতে পারছিনা আমার কি করা উচিত। আমি কিভাবে সংসারে কিছুটা সহযোগিতা করতে পারি। এই মহামারীর ভয়, আমি কিছু করতে পারবো কিনা সেই ভয়, দুটো মিলে মূলত আজকের এই উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা।

এই লকডাউনে থেকে থেকে যখন জীবন অতিষ্ঠ ঠিক তখনই, একদিন ভাবলাম কোথাও গিয়ে কিছু আপন মানুষদের সাথে কিছুটা সময় পার করতে পারলে হয়তবা ভাল লাগতে পারে। যেমন ভাবা ঠিক তেমনি কাজ। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে আমার খালার বাসা বর্ধিত পল্লবীর উদ্দেশ্যে রওনা হই।

খালার বাসায় গিয়ে দেখি আমার মামা-মামী, মামাতো ভাই-বোনসহ আরও অনেক ভালো বাসার লোকজন। আমার আনন্দটাও দ্বিগুণ হয়ে গেল। সকলে একসাথে অনেক গল্প,অনেক স্মৃতিচারণ, অনেক খাওয়া-দাওয়া করলাম। এর মাঝে আমার ছোট মামাত ভাই আদিত্য আমাকে বলে কান্তা আপু তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।

আদিত্য যখন আমাকে ডেকে নিয়ে গেল আমি ভাবতেও পারিনি যে, আমার উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি হওয়ার সাহস আমাকে ডাকছে। ওর প্রথম কথাটাই ছিল “আপু তুমি কিছু একটা করো” আমি বললাম কি করব? ও বলে, তুমি যে কাজটা ভালো পারো, সেটাই করো। যেকোনো ধরনের সহযোগিতা তুমি চাইলে আমার কাছ থেকে নিতে পারো। এক মুহুর্তের জন্য আমার সব ভয় দূর হয়ে গেল। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম যে, অনলাইনে থ্রি-পিসের বিজনেস শুরু করবো।

এরপর থেকে আমার ভাই কয়েকদিন ফোন করে ফলোআপ করছিল এবং আমার আরো ছোট দুই মামাতো উর্মি ও অমিয়াকে ফোন দিয়ে বলল যে, কান্তা আপুকে অনলাইন নিয়ে সকল প্রকার সহযোগিতা করতে। তারপড় উর্মি আমার পেইজের নাম ঠিক করল এবং পেইজ এর লোগো তৈরি করে পেইজ ওপেন করে দিল।

শুরু হলো Farheen Glam and Fashion এর কার্যক্রম। সেই থেকে পথ চলা। আজ নয় মাস চলছে। এর মাঝে আমার পরিবারের কিছু সদস্যের কথা উল্লেখ না করলেই নয়। তার মধ্যে আমার হাজব্যান্ড একজন। যে কিনা ফিনান্সিয়ালি, মেন্টালি এবং ফিজিক্যালি সকলভাবে আমার পাশে ছিল এবং আছে।

আমার কাছ থেকে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে পণ্য কিনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আমার ভালোবাসার আত্মীয়-স্বজন। যে কারণে আজ আমার লক্ষ টাকার উপরে সেল সম্ভব হয়েছে।

তারপর যার অবদান না বললে গল্পটা অর্পূণই থেকে যাবে। সেটা হচ্ছে উই গ্রুপ Women and e- Commerce forum ( WE ) আমার প্রানের গ্রুপ। এখানে শতশত উদ্যোক্তা আপুদের সাথে খুব ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এখান থেকেও আমি অনেক অর্ডার পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ।নিশা আপু এবং রাজিব স্যারে কাছে আমি কৃতজ্ঞ, এত সুন্দর একটা গ্রুপ তৈরি করে উদ্যোক্তা হিসেবে আমাদের পরিচিতি করিয়ে দেওয়ার জন্য।

সবশেষে বলতে চাই। ভাল পজিশনে যেতে সবাই চায়, কিন্তু কখনো নিজেকে পরিবর্তন করে নয়। নিজের ভিতর থেকেই উন্নতি করতে হবে। ভুলে যাওয়া উচিত, কে আঘাত করেছে, কে শত্রু ছিল। তবে ভুলে যাওয়া উচিত হবে না, কে ভালোবাসতো। অতীতকে ভুলে যাওয়া শ্রেয়, যা কাঁদায় এবং বর্তমানের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত যা আনন্দ দেয়।

এটাই ছিল আমার ভয়কে জয় করার গল্প। আমি আপনাদের ভালোবাসার কান্তা চৌধুরী, সব সময় চাই আমার মতন আরও হাজার কান্তা আছে যারা ভয়কে জয় করার জন্য প্রতিনিয়ত লড়ছে তাদের পাশে থাকুন।

আর সময় সুযোগ করে আমার স্বপ্নের ঘরে ঘুরে আসতে পারেন। আমার স্বপ্নের ঘরের ঠিকানা হচ্ছে Farheen Glam and Fashion

এনএইচ২৪/জেএস/২০২১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here