গল্পটা একা লড়াইয়ের

0
3076

মাহীনুর আক্তার লাইজু। আদি বাড়ি ফরিদপুর হলেও ঢাকার মিরপুরে জন্ম ও বেড়ে উঠা। ১৯৮৯ সালে এস এস সি, ১৯৯১সালে এইস এস সি এবং পর্যায়ক্রমে বি.এ, এম.এ, এল.এল.বি ও এল.এল.এম সম্পন্ন করে ঢাকা জজ কোর্টে এডভোকেট হিসেবে এনরোল হই ২০০৫ সালে।

এডভোকেট হিসেবে ঢাকা জজ কোর্টে বিরতি দিয়ে দিয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর প্রাক্টিস করে আসছি।কিন্তু একটা কাজ করতে যেয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায় তা আমি কখনোই পাইনি।তাই একনাগারে কখনো ই কোর্টে কাজ করা হয়নি।

তারপর ও প্রয়োজনের তাগিদে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলাম।পুনরায় ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কোর্টে জয়েন করি।কিন্তু তাতেও বাঁধা এলো ২০২০সালের প্যান্ডামিক এ-র কারনে। কাজ বাদ দিয়ে ঘরে বসে থাকতে হলো।আমি আমার পরিবারের একমাত্র উপার্জম ক্ষম ব্যাক্তি। একজন সিংগেল মা হিসেবে মনে হচ্ছিল এমন কিছু করা দরকার যা উপার্জনের পাশাপাশি যেন একমাত্র ছেলেকে সময় দিতে পারি। ছেলে বড় হয়ে যাচ্ছে। বয়ঃসন্ধির এ-ই সময় মা হিসেবে পাশে থাকার প্রয়োজন অনুভব করলাম।

ইতিমধ্যে লক ডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে।যেহেতু বাইরে যাওয়া যাবে না এবং বাইরে পাঠানোর র মত কেউ নাই তাই বেশ কিছু খাবার কিনে ঘরে মজুদ করে রেখেছিলাম।এবং সেই সময় হটাৎ করে ভাইয়ার এক বন্ধু মেসেজ দিয়ে অনুরোধ করলো ছেলের জন্য একটা কেক বানিয়ে দিতে পারবো কিনা?

মজার ব্যাপার হলো আমি কেক বানাতে পারি কিন্তু শুধু নিজেরাই খেয়েছি বাইরের কাউকে বানিয়ে দেইনি।কিন্তু আল্লাহ কি রহমত সেই ভাইয়া কেকের জন্য পারিশ্রমিক ও দিতে চাইল।

প্রথমে দোমনা করে ভাবলাম ছেলে মাহীর আমার কাছে অনেকদিন ধরে কেক খেতে চাচ্ছিল।তাহলে ভাইয়ার ছেলে সংগে নিজের ছেলের জন্য বানাতে পারবো।

আমার ফোকাস ছিল একই কস্টে শুধু ছেলের জন্য কেক বানানো,টাকার দিকে নয়।কিন্তু ভাইয়া যখন জানতে চাইল কত দিতে হবে?তখন আমি ভাইয়াকে জানালাম কেক আমি কখনো বিক্রি করি নাই।তাই প্রথমে আপনারা খেয়ে নিন।তারপর কেমন লাগলো জানাবেন ও সেই ভাবে দাম ঠিক করে আমকে দিলেই হবে।

আল্লাহ সুবহানাহু উত্তম পরিকল্পনা কারী।আমার রিজিকে যা আছে তা আসবেই। তাই তো আমার বানানো কেকটি খেয়ে ভাইয়া ও তার পরিবারের এত পছন্দ হয়েছে যে আমার ধারণার বাইরের তিন গুন টাকা দিয়েছিল।

তখনই মাথায় আসলো তাহলে কেক নিয়ে কিছু করা যায় কিনা? অবশ্য তখনও শুধু চকলেট কেক ভাল বানাতে পারি।কেক তৈরির কোন প্রশিক্ষণ ছিল না।ছিল না ডিজাইন করার কোন অভিজ্ঞতা। কিন্তু ছোট বেলা থেকেই ব্লক বাটিক, সেলাই,মোম বানানো,পুতুল বানানো, মেহেদী দেয়া, ছবি আঁকা, গ্লাস পেইন্টিং এ-র কাজ জানতাম। তাই সেই আত্নবিশ্বাসে এক দিনের নোটিশে ফেসবুকে রিদহা’স কিচেন-Risha’s Kitchen নামে পেজ খুলে ভাইয়া কে দেয়া সেই কেকের ছবি আপলোড দিয়ে নিজেকে ভিন্ন আংগিকে উদ্দ্যোক্তা হিসেবে কিছু করার সিদ্ধান্ত নিলাম পঞ্চাশের কোঠায় এসে।এবং তত দিনে উই গ্রপে বিভিন্ন উদ্দ্যোক্তাদের গল্প পড়ে জানছিলাম উদ্দ্যোক্তা হিসেবে উঠে দাঁড়ানোর গল্প।

তাই প্রথমে কেকের পাশাপাশি হোম মেড ফ্রোজেন ফুড নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম।তখন আমার আরেক বন্ধু দুলাল ভাই আমাকে পরামর্শ দিলেন যে প্রথমে একটি কাজে ফোকাস করার জন্য।সেই কথা অনুযায়ী আমি কেকের উপর ফোকাস করলাম। কারন ততদিনে বেশ কিছু অর্ডার পেয়ে কমপ্লিট করা হয়ে গিয়েছে।এবং আমার তৈরি কেকের স্বাদ ও ডিজাইন নিয়ে সবাই সন্তুষ্ট।

গত ৮ মাসে ৬৭টি কেক ডেলিভারি দিয়ে প্রায় লাখপতি র কাছাকাছি চলে এসেছি।জীবনে অনেক বার লাখপতি হয়েছি। কিন্তু এ-ই লাখপতি হওয়ার আনন্দই আলাদা।

আলহামদুলিল্লাহ এখন আমার তৈরি কেক এখন অনেক বেশি জনপ্রিয়। কেকের অতুলনীয় স্বাদ ও ডিজাইন এ-র জন্য রিদহা’স কিচেন-Ridha’s Kitchen সবার মনে জায়গা করে নিয়েছে।

এনএনইচ২৪/জেএস/২০২১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here