চলতি মাসের শুরুর দিকে বিশ্বে প্রথম নভেল করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত অনুমোদনের ঘোষণা দেয় রাশিয়া। গত ১১ আগস্ট স্পুটনিক-৫ নামের এই ভ্যাকসিনের ঘোষণা আসার পর থেকেই বিশ্বজুড়ে মস্কোর ভ্যাকসিন তৈরির বৈজ্ঞানিক নীতি-নৈতিকতা ও অন্যান্য মানদণ্ড অনুসরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেই সময় অনেকের কাছে মস্কোর এই ঘোষণা উপেক্ষা করা কঠিন ছিল।
১৯৫৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন স্পুটনিক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে এবং মহাকাশের দৌড়ে জিতে যায়। এখন রাশিয়া বলছে, তারা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেতেও একই পথে হাঁটছে। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, রাশিয়া এই দৌড়ে ঝুঁকি নিয়েছে। যা বিপদের। এ সন্দেহ আরও গাঢ় হয়েছে আন্তর্জাতিক তীব্র প্রতিযোগিতার বিষয়টি সামনে আসায়। ভ্যাকসিন আবিষ্কারের প্রতিযোগিতায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে তীব্র ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদের শর্ট-কাট কৌশল, গুপ্তচরবৃত্তি, বৈজ্ঞানিক নীতি-নৈতিকা উপেক্ষা এবং ঈর্ষার বশবর্তী হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ে কোভিড-১৯ এর একটি ভ্যাকসিন আবিষ্কারকে অত্যন্ত মূল্যবান হিসেবে মনে করা হচ্ছে। এটা শুধুমাত্র জীবন-রক্ষার হাতিয়ার নয়, বরং নানা ধরনের বাধা-বিপত্তি জয় এবং যারা সফল হবেন তাদের মর্যাদার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশ্বিক স্বাস্থ্য আইনের অধ্যাপক লরেন্স গোস্টিন বলেছেন, আমি কখনই কোনও চিকিৎসা পণ্য উদ্ভাবনে রাজনৈতিক পদক্ষেপ এতো তীব্র হতে দেখিনি। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন এমন রাজনৈতিক প্রতীকী রূপ ধারণ করেছে যেটাকে বিশ্বের পরাশক্তিগুলো তাদের বৈজ্ঞানিক সক্ষমতার পরীক্ষা হিসেবে দেখছে। আসলে এর মাধ্যমে তারা নিজেদের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকেও শ্রেষ্ঠ হিসেবে জাহির করতে চায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, বর্তমানে করোনাভাইরাসের অন্তত অর্ধ-ডজন ভ্যাকসিন পরীক্ষার শেষ ধাপে রয়েছে। এর মধ্যে চীনের তিনটি, যুক্তরাজ্যের একটি, যুক্তরাষ্ট্রের একটি এবং মার্কিন-জার্মান অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে একটি ভ্যাকসিন রয়েছে।
সাধারণত ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে কয়েক বছরের দরকার হয়। কিন্তু যখন সব উদ্ভাবকরাই ভ্যাকসিন দ্রুতগতিতে আনতে চাচ্ছেন, তখন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় শর্ট-কাট পন্থা অবলম্বন করে স্পুটনিক-৫ কে রাশিয়ার চূড়ান্ত অনুমোদনের ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে।
গত জুলাইয়ে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা ভ্যাকসিনের গবেষণা রাশিয়ার গুপ্তচররা হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও এই অভিযোগ ক্রেমলিন প্রত্যাখ্যান করেছে। ওই সময় গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানায়, হ্যাকিংয়ের এই চেষ্টার উদ্দেশ্য মূলত কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করা নয়, বরং গবেষণা হাতিয়ে নেয়ার জন্য করা হচ্ছে।
প্রায় একই সময়ে মার্কিন বিচার বিভাগ চীনের দু’টি হ্যাকার গোষ্ঠী বেইজিংয়ের তত্ত্বাবধানে ভ্যাকসিন তৈরির গবেষণা হ্যাকিংয়ের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ তোলে। তবে চীন এই অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, তারা ভাইরাসের ব্যাপারে তথ্য ভাগাভাগি এবং বিদেশি অংশীদারদের সহযোগিতা করছে।