প্রশাসন কঠোর না হওয়ায় কুষ্টিয়া এখন করোনা হটস্পট

0
1300

কুষ্টিয়া শহরের আড়ুয়াপাড়ায় গত বছরের ২২ এপ্রিল এক ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয়। এর পর থেকে কুষ্টিয়ায় একের পর এক রোগী বাড়তে থাকে। সে সময় থেকে করোনা প্রতিরোধে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও রাজনীতিবিদেরা মাঠে নামেন। জেলা-উপজেলায় গঠন করা হয় করোনা প্রতিরোধ কমিটি।

এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই ইউনিয়ন কমিটির কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ে। করোনার প্রথম ঢেউ কোনোরকমে মোকাবিলা করা গেলেও চলতি বছর দ্বিতীয় ঢেউয়ে তছনছ হয়ে পড়ে কুষ্টিয়া। দেড় মাস ধরে জেলায় করোনার তান্ডব শুরু হয়েছে।

সচেতন নাগরিকেরা মনে করছেন, সঠিক সময়ে কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়ায় কুষ্টিয়া এখন করোনা হটস্পটে পরিণত হয়েছে। এখন জেলায় প্রতিদিন ১৩ থেকে ১৫ জন করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি মারা যাচ্ছেন। আর শনাক্ত হচ্ছে দুই শতাধিক।

করোনা প্রতিরোধে ব্যবস্থা- করোনা প্রতিরোধে জেলায় প্রথম ব্যবস্থা হিসেবে পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয়েছিল। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ল্যাবটি স্থাপন করা হয়। সেখানে গত বছরের ২৫ মে থেকে কুষ্টিয়াসহ আশপাশের জেলার মানুষের নমুনা পরীক্ষা করা হয়।

জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম মারা যান কুমারখালীর সেরকান্দি এলাকার মোকাদ্দেস হোসেন (১০১)। তিনি গত বছরের ১০ জুন আক্রান্ত হয়ে পরদিন ১১ জুন বাড়িতেই মারা যান।

প্রথম দিকে কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং বিষয়ে খুবই সজাগ ছিল প্রশাসন। কোনো পরিবারের কেউ আক্রান্ত হলে ওই পরিবারকে লকডাউনসহ পরিবারের সদস্যদের দ্রুত নমুনা পরীক্ষা করা হতো। এখন প্রয়োজন হলে সেটা করা হয়। তবে এর পরিমাণ খুবই কম।

জেলায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা শুধু নামেই ছিল। তবে চলতি বছর ভারত থেকে আসা বাংলাদেশি প্রায় দেড় শ নাগরিককে শহরের তিনটি স্থানে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। এ ছাড়া জেনারেল হাসপাতালসহ জেলার পাঁচটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হয়।

বর্তমানে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালকে ২০০ শয্যার করোনা হাসপাতাল ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে গতকাল পর্যন্ত ২৮৭ জন রোগী ছিলেন। এ ছাড়া ৫টি উপজেলায় আরও ৮০ জন রোগী ভর্তি আছেন।

জেনারেল হাসপাতালেই মূলত রোগীদের চাপ বেশি। শয্যা ছাপিয়ে রোগীদের ঠাঁই হয়েছে মেঝেতে। সেখানে পূর্ণাঙ্গ কোনো আইসিইউ সাপোর্ট নেই। অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে ৬৭১টি, সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপোর্ট রয়েছে ৮৭টি শয্যায়। জেলায় হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা রয়েছে ২১টি।

গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ২৩৪ জন। নমুনা অনুপাতে শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ২১ শতাংশ। আর মারা গেছেন ১১ জন। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত জেলায় ৬৪ হাজার ২০২টি নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৪৩২ জন। মোট মারা গেছেন ২৮৬ জন। চলতি বছরেই মারা গেছেন অন্তত ১৮৬ জন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ এস এম মুসতানজিদ বলেন, এটা ঠিক, স্বাস্থ্য বিভাগের সঠিক সময়ের মিনতি উপেক্ষিত হয়েছে। তাদের উপলব্ধিগুলো মেনে নিয়ে প্রয়োজনীয় জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হলে কুষ্টিয়ায় আজকের পরিস্থিতি না-ও হতে পারত।

করোনাকালে সেবা- করোনাকালে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্সের পাশাপাশি রোগীদের সেবায় স্বেচ্ছায় সহযোগিতা করেছেন জেলা ছাত্রলীগের ৬৫ জন কর্মী। তাঁদের কার্যক্রম একটানা প্রায় ৪৭৫ দিন ধরে চলছে।

করোনাকালে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল প্রায় দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছিল। এর মধ্যে বিভিন্ন খাতে এক কোটির কিছু বেশি খরচ হয়েছে। খরচ করতে না পারায় ২১ লাখ টাকা ফেরত পাঠানো হয়েছে।

সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাবেক সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, প্রশাসনের যেমন নমনীয়তা ছিল, তেমন মানুষও মানেনি। এর ফল বর্তমানে করোনার হটস্পট কুষ্টিয়া। প্রশাসন থেকে যা কিছু করা হচ্ছে, তা শুধুই কাগজে-কলমে, লোক দেখানো। যে কারণে দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here