সামসুন্নাহার থেকে পরী হয়ে উঠার গল্প

0
2179
pori moni

সম্প্রতি বিপুল পরিমাণ মাদকসহ ঢাকাই সিনেমার বহুল আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড আ্যকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব)। বুধবার (৪ আগস্ট) বিকালে পরীমনির বাসায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ মাদক রাখার দায়ে তাকে আটক করে র‌্যাব সদর দপ্তরে নেওয়া হয়েছে।

এদিন পরীমনি ও পিয়াসার গডফাদার হিসাবে পরিচিত কথিত চলচিত্র প্রযোজক ও অভিনেতা নজরুল ওরফে রাজকেও গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। জানা গেছে, আটক নজরুলের মোবাইল ফোনে অসংখ্য তরুণীর পর্নো ভিডিও পাওয়া গেছে।

ঢাকাই চলচ্চিত্রে পা রাখার পর থেকেই অভিনয়, গ্ল্যামারসহ বিভিন্ন কারণে আলোচিত-সমালোচিত পরী। চিত্রনায়িকা পরীমনির উত্থান সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। গ্রামের হতদরিদ্র ঘরের মেয়ে সামসুন্নাহার স্মৃতি ঢাকায় এসে পরীমনি নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন। অভিনয়ের কিছু জানা না থাকা সত্ত্বেও একের পর এক সিনেমায় প্রধান চরিত্রে ডাক পড়ে তার।

ক্যারিয়ারে প্রথম সিনেমা মুক্তির আগেই সর্বাধিকসংখ্যক চলচ্চিত্রে চুক্তিবদ্ধ হয়ে মিডিয়া জগৎ এ রীতিমতো হইচই ফেলে দেন পরী। কখনো কাজ, কখনো বা ব্যক্তিগত কারণে থাকছের খবরের শিরোনামে। নায়িকা হিসাবে রাতারাতি তারকা বনে যান তিনি। অঢেল টাকা আর অভিজাত জীবন যেন স্বেচ্ছায় ধরা দেয় তার হাতে। দামি গাড়ি, কোটি টাকার ফ্ল্যাট, মূল্যবান অলঙ্কার কি নেই তার।

২০১৬ সালের শুরুর দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয় পরীমনির সাথে দুই জনের বিয়ের ছবি, কাবিননামা ও তালাকনামার ছবি।

২০১৯ সালের ৩০ জুন, নগরীর অ্যাপোলো হাসপাতালের ৭ম তলায় একজনকে পিটিয়ে বিতর্কে জড়ান পরীমনি। ওই ব্যক্তি নিজেকে পরীমনির প্রেমিক দাবি করে। মোবাইলে কল রেকর্ড দেখিয়ে তিনি প্রমাণ দেওয়ার চেষ্টা করেন। পরীমনি তা অস্বীকার করে ফিল্মি স্টাইলে তাকে মারতে মারতে কেবিনের বাইরে নিয়ে আসেন। শেষ পর্যন্ত এ ঘটনা থানাপুলিশ পর্যন্ত গড়ায়।

২০১৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি এক সাংবাদিকের সঙ্গে পরীমনির প্রেমের খবর প্রকাশিত হয়। ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে তাদের বাগদান সম্পন্ন হয়। কিন্তু বিয়ে পর্যন্ত যাওয়ার আগেই ভেঙ্গে যায় তা সর্ম্পক।

এরপরই মাত্র ৩ টাকা কাবিনে ২০২০ সালের ১০ মার্চে নির্মাতা কামরুজ্জামান রনিকে বিয়ে করেন পরীমনি। বিয়ের পর দীর্ঘদিন কেটে যাওয়ার পর পরীমনির স্বামী বা সংসারের কোনো খবর পাওয়া যায় না। এরপর শুরু হয় এই সংসার ভাঙনের গুঞ্জন।

সিনেমা শুটিংয়ের আড়ালে পরী মূলত প্রভাবশালীদের ঘনিষ্ঠ হতেই বেশি পছন্দ করতেন। রাজধানীর পাঁচতারকা হোটেলে তাকে লাস্যময়ী ভঙ্গিতে দেখা যায়। প্রায় প্রতিদিনই গভীর রাত পর্যন্ত পার্টি শেষে মদ্যপ অবস্থায় বের হতেন তিনি। এছাড়া পরী ধূমপানে অভ্যস্ত (চেইন স্মোকার)। তার ফ্ল্যাটে বিদেশি সিগারেট ও মদের বিশাল সংগ্রহ রয়েছে।

কয়েকটি ব্যাংকে পরীর মোটা অঙ্কের টাকা রয়েছে। যার বেশিরভাগই তিনি পেয়েছেন শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে। টাকার নেশা তাকে ছাড়ে না। একপর্যায়ে নাম লেখান পর্নোগ্রাফির নিষিদ্ধ জগতে।

এজন্য পরী তার ঘনিষ্ঠ মডেলদের মাধ্যমে একটি চক্র গড়ে তোলেন। উঠতি মডেল এবং চিত্রনায়িকাদের পর্নোছবি তুলে পাঠানো হতো কথিত হাই-প্রোফাইলদের কাছে। তার মাধ্যমে অনেকে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হন।

পরীর ঘনিষ্ঠদের তালিকায় আছেন- পুলিশ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, আমলা, রাজনীতিবিদসহ অনেক প্রভাবশালীর নাম। এদের কেউ কেউ দেশের বাইরে পরীর সঙ্গে ঘুরতে যান। একটি বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান তাকে হ্যারিয়ার গাড়ি উপহার দেন।

পরীকে গ্ল্যামার জগতে নিয়ে আসেন কথিত সিনে প্রযোজক নজরুল ওরফে রাজ নামের এক ব্যবসায়ী। তিনিই প্রথম পরীমনিকে ঢাকায় এনে চলচ্চিত্রে ভেড়ানোর চেষ্টা করেন। সিনেমায় নাম লেখানোর আগে দীর্ঘদিন তার কাছেই থাকতেন পরী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here