গত এক সপ্তাহে রাজশাহী অঞ্চলে স্বাভাবিকের তুলনায় ৩-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে; যা আগে কোনোদিন দেখা যায়নি। দাবদাহে নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয় শুকিয়ে গেছে। এর ফলে চৈত্রের খরতাপে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজশাহী অঞ্চল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাব বেশি দৃশ্যমান হচ্ছে রাজশাহী অঞ্চলে। দিনে দিনে দেশের সবচেয়ে তাপ ও খরাপ্রবণ এলাকা হয়ে উঠছে এ অঞ্চল। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর ও সংলগ্ন আরও কিছু এলাকায় মরুকরণ প্রক্রিয়ার সক্রিয়তা এখন দৃশ্যমান।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক এএসএম গাউসউজ্জামানের মতে, চৈত্রের শেষে রাজশাহী অঞ্চলে গড় স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকে ৩০-৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা সর্বোচ্চ ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে।
কিন্তু বৃহস্পতিবার রাজশাহীসহ আশপাশের এলাকাতে গড়ে ৩৮-৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৪-৫ ডিগ্রি বেশি। গত এক সপ্তাহ ধরে রাজশাহী অঞ্চলের জেলাগুলোর ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বইছে।
দীর্ঘ ৭ মাস এ অঞ্চলে কোনো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ভূমি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। প্রচণ্ড শুষ্কতা ও দাবদাহের কারণে বাতাসে জলীয়কনা শূন্য হয়ে গেছে। বাতাসে আর্দ্রতা বেশ কম। মরুভূমিতে যে ধরনের শুষ্ক ও তীব্র রুক্ষতার প্রবণতা সক্রিয় থাকে রাজশাহীতেও তাই দেখা যাচ্ছে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের রেকর্ড অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাজশাহী নগরী এলাকার তাপমাত্রা ছিল ৩৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে নগরীর বাইরে বরেন্দ্রভূমিতে এ পরিমাণ ৩৯-৪০ ডিগ্রি। ৩০ মার্চ রাজশাহীতে ৩৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। ২৯ মার্চ ছিল ৩৫.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, গড় তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রির উপরে গিয়ে যদি ৩৮/৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে সেটাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলে গণ্য করা হয়।
ফলে এ পরিস্থিতিকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা যায়। আগামী এক সপ্তাহ এ পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে, যদি না বৃষ্টিপাত হয়। এরপরও যদি বৃষ্টির দেখা না মেলে তা হলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।
অত্যাধিক তাপ ও তীব্র গরমে এ অঞ্চলের জনজীবন এখন হাঁসফাঁস। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অটোচালকসহ পথচারীর সংখ্যা কমে যায়। বড় সড়কগুলোতে লোকজনের চলাচলও সীমিত হয়ে যায়।
শুক্রবার নগরীর তেরখাদিয়া এলাকায় কয়েকজন অটোচালককে সড়কের পার্শ্ববর্তী গাছের নিচে আশ্রয় নিতে দেখা যায়। পথচারীদের চলতি পথে গাছের ছায়ায় খানিকটা বিশ্রাম করতেও দেখা গেছে। কয়েক দিনের মধ্যে বৃষ্টি না হলে জনজীবন আরও প্রকট হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. জামাত খান বলেন, বছর বছর রাজশাহী অঞ্চলের তাপমাত্রা বাড়ছে। এবার মৌসুমের শুরুতেই অসহনীয় দাবদাহ ও গরমে জনজীবনে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। গোটা রাজশাহী অঞ্চলজুড়ে পানি সংকট তীব্র আকার নিয়েছে।
আমরা কয়েক বছর ধরে দাবি করে আসছি জলবায়ু পরিবর্তনের কুপ্রভাব মোকাবিলায় অধিক সংখ্যায় গাছপালা লাগানো হোক। ভূউপরিস্থ পানির মাধ্যমে বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করা হোক। কিন্তু কর্তৃপক্ষগুলো এ বিষয়ে উদাসীন। এখন পরিস্থিতি দিনে দিনে আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন হুমকিতে পড়ছে।
এনএইচ২৪/জেএ/২০২১