স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশ
লেখক: Pinaki Bhattacharya – পিনাকী ভট্টাচার্য
খুব আগ্রহ নিয়ে বই টা কিনেছিলাম, যদিও বইয়ের ঋণ এখনো শোধ করতে পারিনি। তবে বইটা পড়ে শেষ করতে পেরেছি। জীবনে দুইটি বই পড়েই কেঁদেছিলাম। তার মধ্যে একটি হলো স্বাধীনতার উত্তর বাংলাদেশ, মানুষের দুঃখ কষ্ট নৈরাজ্য অমানবিক নির্যাতন এইসব দেখলে অশ্রুসিক্ত হয়ে যাই। প্রতিটা শব্দ প্রতিটা লাইন মনে হচ্ছে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে বাস্তব চিত্র, আর মনে হবে না কেনো তার প্রতিচ্ছবি তো বর্তমান সময়ে কিছুটা ভেসে উঠেছে ।
বই থেকে কিছু পয়েন্ট তুলে ধরা হলো..
সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশ থেকে ভারতীয় সৈন্যরা 2.2 মিলিয়ন সম্পদ লুট করে নিয়ে যায় ।
ধর্ষিতা নারীদের কে উপাধি দেওয়া হয় বীরাঙ্গণা বলে যদিও তারা সমাজের ছিল অবহেলিত বঞ্চিত এবং লাঞ্ছিত ।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনে রেসকোর্সের জনসভায় আসা দুই শহীদের জননী দরিদ্র করিমুন্নেসার গল্প চোখে পানি এনে দিয়েছে। করিমুন্নেসার দুই ছেলেকে যখন পাকবাহিনী গুলি করে মেরে ফেলে তখন করিমুন্নেসা তার মলিন শাড়ি ছিড়ে দুই সন্তানের রক্ত মুছে রেখে দিয়েছিলেন। সেই শুকনো রক্তমাখা শাড়ির টুকরো করিমুন্নেসা নিয়ে এসেছেন বঙ্গবন্ধুকে দেবেন। করিমুন্নেসাকে ভলান্টিয়াররা আটকালে সেই রক্তমাখা কাপড় উচু করে বলছেন, লৌ (রক্ত) আনছি শ্যাক সাবেরে দিমু।
বইতে পিনাকী আরও লিখেছেন —
“করিমুন্নেছা অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘কোন সুমায় আইবো। তারে দেখলে আমার সব দুক শেষ অইবো। শেখ মুজিবুর রহমান হয়ে উঠেছিলেন কোটি-কোটি বঞ্চিত মানুষের স্বপ্নের নেতা, যার অলৌকিক স্পর্শে তাদের সব দুঃখের অবসান হবে বলে তারা বিশ্বাস করেছিল।”
ভয়টা ছিল ৭২ থেকে ৭৫ সাল নিয়ে… সে সময়ের শাসনের কথা লিখেছেন খুব সতর্কভাবেই। সেই সমালোচনার অংশগুলো নিয়েছেন পাড় আওয়ামী লীগারদের লেখা থেকেই। যেমন, তিনি আবদুল গাফফার চৌধুরীর লেখা থেকে রেফারেন্স নিয়েছেন।
তবে হ্যাঁ আপনি যদি প্রকৃত ইতিহাস জানতে চান তবে অবশ্যই এই বইটা পড়বেন।
ইতিহাস জানতে হবে, ইতিহাস কতটা বর্বর কতটা কোণঠাসা কতটা অমানবিক ছিল তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। আচ্ছা ঐ মানুষগুলোর কি কোন মনুষ্যত্ববোধ বিবেকবোধ নৈতিক মূল্যবোধ এসবের কিছুই ছিল না। নাকি সম্পদ ক্ষমতা এসবই তাদের মূল লক্ষ্য ছিল। ঐ মানুষগুলো কি সৃষ্টিকর্তার মুখোমুখি হবে না?
রিভিউ ক্রেডিট-ফয়সাল আহমেদ আর্ণব
তোলারাম কলেজ নারায়ণগঞ্জ
অনার্স তৃতীয় বর্ষ (বাংলা বিভাগ)