জীবন কি-থেকে কি হয়ে যায় !

0
1483

সদ্য নাবালক থেকে যখন বালকের পথে হাঁটতে শুরু করলাম, ঠিক তখনি মায়ের ইচ্ছেতে মাদ্রাসায় অধ্যয়ন করিতে, আর সেজন্যই পাড়ি জমাতে হয় নানুদের বাড়িতে। নতুন জায়গায় অপরিচিত লোকজন খুব একাকি লাগতো, তবুও থেমে যায়নি পথচারীতে, সেই হাটা ৫/৬/৭/৮ এর গন্ডি পেরিয়ে হঠাৎ থমকে যাই !

কারণ আবেগের হাওয়া বইছিল অঙ্গে, সূর্য উদয়ের পূর্বের প্রার্থনা শেষে, অধ্যায়নের প্রস্তুতকালে স্নান করিবার জন্য রাস্তা ডিঙিয়ে জলসায় যাওয়া হত রোজ সকালে, পথিমধ্যে দেখা হতো এক মায়াবতী রূপসীর সাথে, মায়ের সাজে সজ্জিত হয়ে, এক মুষ্টি চুল রাবারে বন্দী, অঙ্গ কে আলিঙ্গন করে রেখেছিল স্কুল উনিফর্ম যাত্রা পাঠ্যশালায়।

অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে চাওয়া- যেন চোখের পলক থমকে গিয়েছে, যেন হ্যাভেন থেকে নেমে আসা নব ভূমিষ্ঠ এক আপ্সরা। মনের অনুভূতি প্রকাশ করিতে আমি ব্যাকুল হয়ে ছিলাম।

প্রকাশ করিবো বা কি করে, সেই সাহস হয়নি যে আমার, প্রতীক্ষায় চেয়ে রইলাম কি করে বলি মনের কথা, সময় যায়, দিন যায়। কিন্তু আমি সাহস সঞ্চয় করিতে পারিনি, মনের কথা জানান দিতে!

প্রতিনিয়ত কর্মশালায় মধ্যিখানে দেখা সেই পথে, কোন উপায় না পেয়ে প্রদান করিলাম সালাম, মুচকি হেসে চলে গিয়েছিল নিজের গন্তব্যের উদ্দেশে, কখনো পাইনি সালামের উত্তর, তবে সালামের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠেছিল হাস্যজ্জল ঠোঁটে, দিন গিয়ে মাস পেরুলো, মাস গিয়ে বছর, কিন্তু রোজ আদান হতো আমার সালাম আর তাহার কখনো বিরক্ত – আবার কখনো হাসি, হয়তো সে বুজেছিল, আমার না বলা কথার বাণী, এইভাবে চলতে থাকে আমার নবম, দশম ,একাদশ, দ্বাদশ ।

দ্বাদশ পার করে চলে আসলাম নিজ গৃহে ! অপেক্ষা স্নাতকের গণ্ডি। আর অপেক্ষা করেছিলাম অপ্রত্যাশিত ভালোবাসার জন্য। সৃষ্টিকর্তা আমার মনের কথা শুনেওছিল । তাইতো স্নাতক এর শুরুতেই দেখা দিল সেই স্বপ্নের আপ্সরা, যাকে খুঁজে পেলাম ভার্চুয়াল জগতে।

বার্তা আদান-প্রদান চলতে থাকে মাসব্যাপী , সময়ের সাথে সাথে মনের আরজি প্রদান করি। অবশেষে প্রত্যাশার সুফল বয়ে আনলো, যেন পৃথিবীর সমস্ত সুখ এসে আমাকে বরণ করে নিল, অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা তাও যাকে বলতে পারিনি মনের কথা পরিশেষে সেই যদি হয় অধিকারের ব্যক্তিত্ব মনুষ্য।

আমি যে হই আনন্দে আত্মহারা, তাইতো মাতৃ গৃহে না গিয়ে চলে যাই তাহার সন্ধানে । ভালোবাসায় বর্ণের পর, প্রথম দেখা হয় বৃষ্টি উজ্জ্বল প্রকৃতির মাঝে, প্রথম দেখেই হেসেছিল তিনি, সেই হাসি বরণ করে নিয়েছিলাম আমি আর বৃষ্টি । প্রথম দেখাই প্রকৃতি বরণ করে নিয়েছিল আমাদের, প্রথম স্পর্শ যেন প্রকৃতির মিরাক্কেল। সেই অনুভূতি আজও অনুভব করি। কর্মব্যস্ততায় ফিরে এসেছি ব্যস্ত ইট-পাথরে দেশে।

কিন্তু মন তো মানে না সে সর্বদায় তাহার আলিঙ্গনে জড়িয়ে রেখেছিল নিজেকে! দেহখানি রোবটের মতন সজ্জিত ছিল আমার কর্মব্যস্ততায়। দিন গেল মাস পেরিয়ে, আবার চলতে শুরু করলাম তার খোঁজে।

অবশেষে সুখ এসে জড়িয়ে নিলো আমায়, তাহার হাসি উজ্জ্বল চেহারা ঐ চোখের চাহনি যেন ঘায়েল করে আমায়, প্রশান্তির নিঃশ্বাস চলো দু’তিন দিন, সেইসাথে বক্ষে জড়িয়ে নেওয়ার সৌভাগ্য হল অর্জন।

খানিক সময়ের জন্য উপলব্ধি করিতে পারলাম যেন এই বন্ধন আমার জন্য অপেক্ষায় চেয়েছিল। চলতে থাকে আমাদের ভালোবাসার দিনগুলি, দুজন দুজনের প্রেমে যেন অমর হয়ে গিয়েছি, তাহাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে আমার উদাসীন মন! সে যেন স্থিরতা খুঁজে পাচ্ছেনা তাহাকে ছাড়া ।

পরিশেষে কেটে গেলো একটি বছর। সময়ের সাথে সাথে ভালোবাসার গভীরতা যেন আকাশচুম্বী, তাহার দীর্ঘ অনুপস্থিতে-চিন্তার ভাঁজ কপালে ভেসে ওঠে। যেন উন্মাদ হয়ে যায় তাহার খোঁজে, মোটেও সহ্য হত না তাহার দীর্ঘ অনুপস্থিতি, খানিকের অনুপস্থিতি উদাসীন করে তুলিত আমায়! একদিনের শব্দ ধ্বনি না শুনিলে, তন্দ্রায় বরণ করি তো না মোরে ! এইরকম কয়েক রাত কাটিয়েছি তাহার চিন্তায় ।

এত অরাজকতার পরেও চলিতে থাকে ভালোবাসা তাহার গতিতে , রাগ অভিমান সবকিছু ভুলে গিয়ে সে জড়িয়ে নিত তাহার ভালোবাসায় । কতশত বার এইরকম ভাঙ্গিয়ে ছিল মোর অভিমান! যেন ধৈর্যশীলতার মুকুট পরে জন্মেছিল। মন থেকে শ্রদ্ধা জানাই তোমার এই ধৈর্যশীলতা কে।

আর আমি তাহার ভালোবাসার পরশে পাগল প্রায়, এইভাবে কেটে যায় আরও একটি বছর । কোথায় যেন পড়েছি অতিরিক্ত ভালোবাসা কারণে, অনেকেই হয়েছে পাগল আবার অনেকের হয়েছে বিচ্ছেদ আমারও হয়েছিল ক্ষণিকের সমাপ্তি। আগুনে পুড়ে যেমন সোনা খাঁটি হয়, তেমনি ঝগড়ার পরে ভালবাসা মধুর হয় ….

ঝগড়া কখনো ভালোবাসা কে শেষ করতে পারে না বরং ভালোবাসাকে ভালো বাসতে শেখায়। আমারও তাই হয়েছিল। পারেনি থাকতে, তাইতো রাগ অভিমান ক্রোধ সকল কিছুর পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে ফিরে এসেছি তাঁরই কাছে। ভালোবাসার চাদরে আবার আবদ্ধ হলাম, দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হোক এই পথচলা !!

ফয়সাল আহমেদ আর্ণব
তোলারাম কলেজ নারায়ণগঞ্জ
অনার্স তৃতীয় বর্ষ (বাংলা বিভাগ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here